মহেশখালীতে যুবক খুনের ঘটনায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা!

গাজী মোহাম্মদ আবু তাহের, মহেশখালী :

দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর ক্রাইমজোন হিসেবে পরিচিত কালারমার ছড়া ইউনিয়নে জলদস্যুতা ছেড়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে আত্মসমর্পণ করে আলোর পথে আসা আলা উদ্দিনকে  আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত ৫ নভেম্বর রাতে খুন করা হয়।

এ ঘটনার পরপরই নিহত যুবকের পক্ষের লোকজন এলাকায় তাণ্ডব শুরু করে ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাট চালায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

শনিবার বিকেলে জানাজা শেষে নিহত আল উদ্দিনকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

কালারমার ছড়ায় রুহুল কাদের নামের এক যুবক খুন হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় আবারও এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে এলাকার আইনশৃঙ্খলার বেশ অবনতি ঘটেছে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।

তবে পুলিশের দাবী-তারা আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে কাজ করছে,সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অপরদিকে আলা উদ্দিন খুনের ঘটনায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে বাকিদের অজ্ঞাত দেখানো হয়।

সেদিন আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব-শত্রুতার জের ধরে একদল দুর্বৃত্ত গাড়িতে করে এসে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে চকরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয় বলে নিহতের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ছামিরা ঘোনা এলাকায় আলা উদ্দিনের স্বজনরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা প্রতিপক্ষের একাধিক বসতবাড়িতে লুটপাট করে ও আগুন ধরিয়ে দেয় বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

খবর পেয়ে মহেশখালী থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন ও বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানা যায়। আগুনে চারটি বাড়ি পুড়ে যায় বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছেন।

গত ১৮ অক্টোবর ও কালারমার ছড়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের গুলি ও কোপে খুন হন বঙ্গবন্ধু মানব কল্যাণ পরিষদের মহেশখালী উপজেলা শাখার সভাপতি রুহুল কাদের রুবেল।

গত ৫ নভেম্বর শুক্রবার নিহত আলা উদ্দিন ওই হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি ছিল বলে জানা গেছে।

অল্পদিনের ব্যবধানে কালারমার ছড়ায় পর পর দুইটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটার পর এলাকার আইনশৃঙ্খলা অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় লোকজনের বিবরণে -দুইটি খুনের ঘটনার মুটিভ একই ধরণের বলে জানা যায়।

দুইটি খুনের ঘটনাতেই ভাড়াটে মাস্তান ব্যবহার হয়েছে এবং আলা উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি অনেকটা ‘খুনের বদলায় খুন’ বলে মনে করেন অনেকই। দুইটি খুনের ঘটনাতেই হন্তারকরা গাড়িতে করে এসে ধারাবাহিক ভাবে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে স্থান ত্যাগ করে। দু’টি ঘটনাই রাতের কাছাকাছি সময়ে প্রধান সড়কের উপর ও সড়কের খুব কাছে। তবে গত ১৮ অক্টোবর নিহত রুহুল কাদের এর লোকজনই আলা উদ্দিনকে হত্যা করেছে নিহতের পারিবারিক সূত্রের দাবি।

পর পর দুইটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।

কালারমার ছড়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনকেদিন অবনতি হওয়ায় অনেককেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।

এ সব ফেসবুক ব্যবহারকারীরা দ্রুত পুলিশ কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আরও ভয়ঙ্কর অবস্থা অপেক্ষা করছে বলে অভিমত দিচ্ছেন।

এদিকে জেলা হাসপাতালে মরদেহের ময়না তদন্তের পর গতকাল বিকেলে কালারমার ছড়া বাজার মাঠে নিহতের জানাজা শেষে স্থানীয় ভাবে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জানাজার মাঠে বক্তব্য রাখেন কালামার ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ,তিনি বলেন-

এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড,হত্যার নীলনকশা করতে বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীরা বৈঠক করেছে,এমনি তাকে হত্যারও ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেন।

পর পর ঘটা দুইটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবনতি হওয়া আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে পুলিশের কঠোর ভূমিকার পাশাপাশি দ্রুত সময়ে কালামার ছড়া থেকে সরিয়ে নেওয়া পুলিশ বিট সচল করার দাবি জানান।

মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুল হাই জানান-আলাউদ্দিন খুনের ঘটনায় নিহতের ভাই সুমন বাদি হয়ে ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। প্রধান আসামী করা হয়েছে মোহাম্মদ মামুনকে।

মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়।

অফিসার ইনচার্জ আরও জানান-গতকাল বিকেল থেকে কালামার ছড়ায় পুনরায় পুলিশ বিট স্থাপন করা হয়েছে।

দুইজন অফিসারের নেতৃত্বে মোট ১২জন পুলিশ সদস্য ওখানে দায়িত্ব পালন করছেন। হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

নিহতের জানাজার মাঠে বক্তব্য রাখেন- সহকারী পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম, তিনি এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে ঘোষণা দেন।

আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।

মহেশখালীতে আইনশৃঙ্খলা অবনতির বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের এমপি আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক জানান-একই এলাকায় পর পর দুইটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খুবই দুঃখজনক,সন্ত্রাসী যেই হোক কাউকেই ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এলাকার আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে কঠোর ভূমিকা রাখার বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে ইতোমধ্যে সভা করা হয়েছে উল্লেখ করে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে সবাইকে কঠোর ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।